চট্টগ্রামের ১১ তরুণের সবাই মেরিন ক্যাডেট বা জাহাজের নাবিক। চট্টগ্রামের মেরিন ফিশারিজ একাডেমি থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করে অনেক দিন ধরে বিদেশি জাহাজে চাকরি করছেন। সমুদ্রগামী জাহাজে কাজ করলেও তাঁদের স্বপ্ন ছিল উদ্যোক্তা হওয়ার এবং সেটা স্থলভাগেই।
জাহাজের চাকরিটা মূলত তিন মাস দীর্ঘ, বাকি তিন মাস স্থলভাগে পরিবারকে সময় দেওয়া ছাড়া তেমন কাজ থাকে না। সেই সময়কে কাজে লাগাতে ১১ বন্ধু মিলে ২০১৪ সালে গড়ে তোলেন এভারনিউ টেকনোলজিস লিমিটেড (ইটিএল)। উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ১১ পরিচালক প্রত্যেকের নিজস্ব পুঁজি দিয়ে মাত্র দেড় কোটি টাকা বিনিয়োগ দিয়ে কাজ শুরু করেন তাঁরা।
ইলেকট্রনিকস, ইলেকট্রিক বিভিন্ন পণ্যের মধ্যে লাইটিংশিল্পকে বেছে নিয়ে ২০১৪ সালেই প্রথমার্ধে চট্টগ্রামের মুরাদপুরের হামজারবাগে ১৬০০ বর্গফুটের জমিতে কারখানা চালু করা হয়। এই খাতে বিনিয়োগের কারণ হিসেবে কম্পানি পরিচালক (অপারেশন) মেরিন ইঞ্জিনিয়ার রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারে নিম্নমানের লাইটিং পণ্য বিক্রির চরম প্রতিযোগিতা চলছে, ক্রেতারা সেই পণ্য চড়া দামে কিনে ঠকছেন আর বিদ্যুৎ সাশ্রয় তো হচ্ছে না।
আমরা যদি ভালো মানের পণ্য সাশ্রয়ী দামে দিতে পারি তাহলে ভালো ক্রেতা মিলবে, দেশীয় কর্মসংস্থান হবে। কারণ বাজারে ভালো মানের পণ্যের বড় সংকট। সেই জায়গাতেই আমরা কাজ শুরু করি।’
১১ এই উদ্যোক্তা হলেন, ক্যাপ্টেন সাজ্জাদ হোসেন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ মাহফুজুল করিম, চিফ ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ এরশাদুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন রাশেদুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন কাজী মোহাম্মদ জাকারিয়া, চিফ ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ জামিল উদ্দিন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আবু তাহের, চিফ ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আরিফ চৌধুরী, ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ মনির উদ্দিন মনছুরী, ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন ও মোহাম্মদ খলিলুর রহমান মজুমদার।
উদ্যোক্তারা বলছেন, ইটিএল কারখানাতে ২০১৪ সাল থেকে বিভিন্ন ওয়াটের সিএফএল বাল্ব উৎপাদন দিয়ে যাত্রা শুরু হয়। যখন বাজারে সিএফএল বাল্ব বা জ্বালানি সাশ্রয়ী বাল্বের জমজমাট বিক্রি চলছে। সে সময় বাজারে আসতে শুরু করেছে এলইডি লাইট। ইটিএল কম্পানি ক্রেতা চাহিদা মাথায় রেখে ২০১৬ সালের শুরু থেকে এলইডি বাল্ব তৈরি শুরু করে।
রাশেদুল ইসলাম বলছেন, প্রথমে মাত্র এক কনটেইনার পণ্য দিয়ে উৎপাদন শুরু হয়। শুরুতে প্রতি মাসে ১০ হাজার (সিএফএল) বাল্ব তৈরি ও বিপণন করি। বাজারে ভালো সাড়া মিললে কম্পানির উৎপাদন বাড়তে থাকে। এখন সিএফএল বাল্ব ছাড়াও কারখানায় এলইডি বাল্ব ও এলইডি টিউব লাইট উৎপাদন হচ্ছে।
একই সঙ্গে এলইডি রিচার্জেবল লাইট (বিদ্যুৎ না থাকলেও চলে), এলইডি রিচার্জেবল টিউব লাইট, ফ্লাড লাইট, স্ট্রিট লাইট তৈরি করছি। সব মিলিয়ে উৎপাদন বেড়ে মাসে ২০ হাজারে উন্নীত হয়েছে। আর নিজস্ব বিনিয়োগের পরিমাণও বেড়ে দাঁড়িয়েছে আড়াই কোটি টাকা। মুরাদপুরে কারখানার পরিসর বেড়ে এখন সেটি তিন হাজার বর্গফুটে উন্নীত হয়েছে।